ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ও নয় দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কয়েকটি বামপন্থি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের অপসারণও দাবি করা হয়।
কলাবাগানে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর পর ধর্ষণের বিষয়টি সামনে আসার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার সকালে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনগুলো। নোয়াখালীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার পরও নয় দফা নিয়ে রাজপথে নেমেছিল তারা।
ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় দাবি করে সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি তার ফলাফল এই ঘটনা। গত ১০ বছরে এক শতাংশ ধর্ষণের ঘটনার বিচার আমরা করতে পারিনি। ধারাবাহিকভাবে এগুলো আমাদের দেশে ঘটেই চলেছে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফয়েজউল্লাহ, নারী মুক্তি কেন্দ্রের নাইমা খালেদ মনিকা, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সুস্মিতা মরিয়ম, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সুস্মিতা রায় সুপ্তি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের আশিকুর রহমান জুয়েলসহ অনেকে।
নোয়াখালীর ওই ঘটনার পর ধর্ষণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সচেতনতা তৈরিতে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছিল তারা। এর অংশ হিসেবে ১৬ ও ১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে লংমার্চ করা হয়।
আন্দোলনকারীদের নয় দাবি
১. ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ‘ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে।
২. পাহাড়ে সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
৩. সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।
৪. ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞানে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
৫. তদন্ত চলাকালে ভুক্তভোগীকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তার আইনি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে ঝুলে থাকা মামলা দ্রুত শেষ করতে হবে।
৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭৯-১৫৫ (৪) ধারাকে বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।
৮. পাঠ্য বইয়ে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন বাদ দিতে হবে।
৯. গ্রামীণ সালিশে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে হবে।